আদম এর বংশধর নারী পুরুষরা তাঁর শিক্ষা অনুসারে এক আল্লাহর উপাসনা করতে থাকে।[৩] তাদের মধ্যে অনেক ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন যাদেরকে তার সম্প্রদায়ের মানুষ সম্মান ও মান্য করত।[৩] বলা হয় যে, যখন এই ধার্মিক লোকেরা মারা যান, তখন তাঁদের ভক্তরা তাঁদের বসার জায়গাগুলোকে উপাসনালয় বানিয়ে নেয় এবং তাঁদের চিত্রও সেখানে ঝুলিয়ে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, এইভাবে তারা তাঁদেরকে স্মরণ করে তারাও তাঁদের মত আল্লাহর উপাসনা করবে। তারপর যখন কিছু কাল অতিবাহিত হল, তখন তারা এই চিত্রগুলোর মূর্তি নির্মাণ করল। আরও কিছু কাল পর পরবর্তী বংশধররা শয়তানের প্ররোচনায় এসব মূর্তির উপাসনা করতে শুরু করে। এসব পথভ্রষ্ট মানুষদের সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ হযরত নূহ কে তাদের মাঝে নবি হিসাবে প্রেরণ করেন।[৩]
কুরআনে ৪৩ বার নূহ নবীর উল্লেখ পাওয়া গেছে। কুরআন অনুসারে, নূহ সাড়ে নয়শত বছরের দীর্ঘ বয়স লাভ করেছিলেন এবং সারা জীবন মানুষকে সঠিক পথে আনার জন্য কাজ করেন। কিন্তু তাঁর জাতি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে। ফলে তাঁর জাতি ভয়াবহ বন্যায় ধ্বংস হয়ে যায়।
কুরআনে বলা হয়েছে,
"নিশ্চয় আমরা নূহ্কে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের প্রতি এ নির্দেশসহ যে, আপনি আপনার সম্প্রদায়কে সতর্ক করুন তাদের প্রতি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসার আগে। তিনি বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়, নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী - এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্-র উপাসনা করো, তাঁকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং তোমাদেরকে অবকাশ দেবেন এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। নিশ্চয় আল্লাহ্ কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত হলে তা বিলম্বিত করা হয় না; যদি তোমরা এটা জানতে’।"[কুরআন ৭১:১–৪]
তাঁর সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে,
"আর তারা বলে, ‘তোমরা তোমাদের উপাস্যদের বর্জন করো না। বর্জন করো না ওয়াদ, সুওয়া', ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক ও নাসরকে’।"[কুরআন ৭১:২৩]
নূহের বিরুদ্ধে তাদের যুক্তি সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে,
"অতঃপর তাঁর সম্প্রদায়ের নেতারা যারা কুফরী করেছিল, তারা বলল, ‘আমরা তো তোমাকে আমাদের মত একজন মানুষ ছাড়া কিছু দেখছি না এবং আমরা দেখছি যে, কেবল আমাদের নিচু শ্রেণীর লোকেরাই বিবেচনাহীনভাবে তোমার অনুসরণ করেছে। আর আমাদের উপর তোমাদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব আমরা দেখছি না; বরং আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করি’।"[কুরআন ১১:২৭]
আরও বলা হয়েছে,
"অতঃপর তার সম্প্রদায়ের নেতারা, যারা কুফরী করেছিল, তারা বলল, ‘এ তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, সে তোমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চাচ্ছে। আর আল্লাহ্ ইচ্ছে করলে ফেরেশতাই পাঠাতেন। আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদের কালে এরূপ ঘটেছে বলে শুনিনি। সে কেবল এমন এক লোক, যার মধ্যে পাগলামী রয়েছে। অতএব তোমরা তার সম্পর্কে কিছুকাল অপেক্ষা করো’।"[কুরআন ২৩:২৪–২৫]
তাদের যুক্তির জবাবে কুরআনে বলা হয়েছে,
"আর যদি রাসূলকে ফেরেশতা বানাতাম তবে তাকে পুরুষ মানুষই বানাতাম। ফলে তারা যে সন্দেহ করে, সে সন্দেহেই তাদেরকে রেখে দিতাম।"[কুরআন ৬:৯]
"তিনি (নূহ) বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আমাকে বল, আমি যদি আমার রব প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাঁর নিজের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান করে থাকেন, অতঃপর সেটা তোমাদের কাছে গোপন রাখা হয়, আমরা কি এ বিষয়ে তোমাদেরকে বাধ্য করতে পারি, যখন তোমার এটা অপছন্দ কর? আর হে আমার সম্প্রদায়, এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোনো সম্পদ চাই না। আমার প্রতিদান শুধু আল্লাহর কাছে। যারা ঈমান এনেছে, আমি তাদের তাড়িয়ে দিতে পার