আইলানের মৃত্যুর পর শরণার্থী ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব সহনশীল হয়ে ওঠছে বলে ধারণাটি যখন প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই ভয়াবহ এক ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিলেন হ্যাঙ্গেরির এক ফটোসাংবাদিক। শিশুসহ বেশ কয়েকজন আশ্রয়প্রার্থীকে লাথি দিয়ে ফেলে দেন ওই নারী সাংবাদিক। সেই সময় তোলা ছবি গোটা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার পর এখন প্রশ্ন ওঠেছে, অসহায় মানুষগুলোর প্রতি কার্যত কতটা আন্তরিক ইউরোপ।
পেট্রা লাসজলো নামের ওই ফটো সাংবাদিক কাজ করেন হ্যাঙ্গেরির এক টিভি চ্যানেলে। তিনি শরণার্থীদের ছবি তুলতে ছুটে গিয়েছিলেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় রোসজকে নামক এলাকায়। সার্বিয়ার সীমান্তবর্তী ওই অঞ্চলটি দিয়েই হ্যাঙ্গেরিতে প্রবেশ করে থাকে শরণার্থীরা। সেখানে অবৈধভাবে প্রবেশকারী হাজার খানেক শরণার্থীদের ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। পুলিশি বেষ্টনি থেকে পালিয়ে আসেন তাদেরই কয়েকজন। ছুটে বেরিয়ে আসার সময় শিশু কোলে এক পুরুষকে সজোরে ধাক্কা মারেন পেট্রা। এতে তার কোল থেকে ছিটকে পড়ে শিশুটি। মাটিতে পড়ে যান শিশুটির বাবাও। এখানেই শেষ নয়। পরে ওই ফটোসাংবাদিক আরো এক শরণার্থী শিশুকে লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন।
মঙ্গলবার প্রকাশিত টিভি ফুটেজে দেখা যায়, ওই ফটোসাংবাদিক হ্যাঙ্গেরির ইন্টারনেটভিত্তিক ‘এনওয়ানটিভি’ নামের এক টিভি চ্যানেলে কাজ করেন। এই চ্যানেলটি হ্যাঙ্গেরির ডানপন্থি রাজনৈতিক দল জোব্বিক পার্টির ঘনিষ্ঠ বলেও জানা গেছে।
এ ঘটনায় পরে ওই চ্যানেলের প্রধান সম্পাদক জাবলকস কিসবের্ক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ফেসবুকে দু:খ প্রকাশ করে একটি বিবৃতি পোস্ট করেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের একজন সহকর্মী রোসজকে এলাকায় ছবি তুলতে গিয়ে আজ যে আচরণ করেছেন তা মেনে নেয়া যায় না।’ পেট্রাকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়ে জাবলকস আরো বলেছেন, ‘আজ থেকে ওই নারী ফটো সাংবাদিকের নিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। আশা করছি বিষয়টি এখানেই থেমে যাবে।’
দিন কয়েক আগে সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা আয়লান কুর্দির নিষ্প্রাণ দেহের ছবি তুলে বিখ্যাত হয়েছিলেন তুর্কি ফটো সাংবাদিক নিলুফার। এবার শরণার্থীদের লাঞ্ছিত করে কুখ্যাত হলেন ইউরোপের ওই নারী ফটো সাংবাদিক। এই ঘটনা ইউরোপে হ্যাঙ্গেরির মত কট্টরপন্থি দেশগুলো শরণার্থীদের প্রতি কতটা বিদ্বেষ পোষণ করে তারই এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।